১৮৩৯ সাল থেকে আগস্ট মাসের উনিশ তারিখকে আলোকচিত্রের বিশেষ দিন হিসেবে বিশ্বের সকল আলোকচিত্রীরা ‘বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস’ উদযাপন করে আসছে।
প্রতি বছর ১৯ আগস্ট পালন করা হয় এই দিবসটি৷ সারা পৃথিবীতে সবাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস।
সেই আলোয় আলোকিত হয়ে প্রতিবছরের ন্যায় দেশের ২য় বৃহত্তর আলোকচিত্র সংগঠন ‘চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র উদ্যেগে ১৯ আগষ্ট চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি চত্ত্বরে দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক এবং ‘সিআরবি’ ধ্বংসের এক প্রতিবাদ সভা সোসাইটি’র সভাপতি আলোকচিত্রী অনুজ কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করতে রেলওয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে।
প্রায় এক কোটি মানুষের মহানগরী চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত সিআরবি। ব্রিটিশ আমলের চুন-সুরকির সিআরবি ভবনকে ঘিরে শতবর্ষী গাছগাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর নজরকাড়া বাংলোগুলো ঘিরে মন জুড়ানো এক প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে সিআরবিতে। প্রাকৃতিক এই পরিবেশকে নগরবাসী চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে থাকেন।
কিন্তু এখানে বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে সিআরবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা পালন করে চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র , চট্টগ্রাম।
অন্যদিকে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজ ও সিআরবি রক্ষা মঞ্চ।
প্রতিবাদ সমাবেশে সিপিএস বক্তারা বলেছেন, সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামবাসী তথা সারাদেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি রক্ষায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই। হাসপাতাল হোক সেটা আমরা চাই। তবে সেটা কোনভাবেই সিআরবিতে নয়।
বক্তারা আরও বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। মানুষের চেতনা, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাত আলোকচিত্রী, সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শোয়েব ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ফটোসাংবাদিক ও সোসাইটির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দেবপ্রসাদ দাস দেবু, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমী ট্রাস্টের আহ্বায়ক বিশিষ্ট ছড়াকার আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলী ও ড্রিমস অব আর্টিস্ট এর চেয়ারম্যান সামছুল হূদা আহমেদ।
সভার শুরুতে ১৫ই আগষ্ট স্মরণে এবং এদিনে মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিব পরিবারের প্রয়াত সকল সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
বিশ্ব আলোকচিত্র দিবসের তাৎপর্য এবং চট্টগ্রামের ফুসফুস ‘সিআরবি’ ধ্বংস পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও সোসাইটির আজীবন সদস্য লায়ন লোকপ্রিয় বড়ুয়া, সাবেক সহ-সভাপতি শামছুদ্দোহা সওগাত, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী মিঠু, কার্য নির্বাহী সদস্য কাবেরী আইচ, আলোকচিত্র সাংবাদিক মুরশেদুল আলম, আজীবন সদস্য আমিনুর রহমান রুমেল প্রমুখ।