বুধবার, এপ্রিল ৯, ২০২৫

অভুক্ত কুকুরগুলোকে খাওয়ান কণ্ঠশিল্পী বাপ্পী

Must read

ঢাকা, ৩১ মার্চ- করোনারভাইরাসের প্রভাবে সারা দেশ এখন স্থবির প্রায়। শহুরে কোলাহল আর যান্ত্রিকতার সাথে মানিয়ে নেওয়া নগরবাসীর কাছে ঢাকাও এখন অচেনা। রাস্তাঘাট ফাঁকা, হোটেল বন্ধ, মার্কেট বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তাই খেটে খাওয়া মানুষেরা হয়ে পড়েছে কর্মহীন।

পাশাপাশি রাজধানীর অলিগলিতে কুকুরগুলোও খেতে না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মলিন মুখে।

এদিকে ‘বাউল এক্সপ্রেস’ ব্যান্ড দলের লিড ভোকালিস্ট ও পশুপাখিপ্রেমী মশিকুর রহমান বাপ্পী গত ২৭ মার্চ থেকে নিয়মিত রাজধানীর কয়েকটি এলাকার অভুক্ত কুকুরকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। শুধু তাই নয় তিনি ফুটপাতবাসীর মাঝেও এক বেলা নিজের বাড়িতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করছেন।

প্রতিদিনের মতো সোমবার (৩০ মার্চ) রামপুরা, হাজিপাড়া, খিলগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ফুটপাতবাসীর মাঝে খাবার বিতরণ করেন এই গায়ক। এ সময় অভুক্ত কুকুরগুলোকেও খাবার খাওয়ান এই পশুপ্রেমী।

ফুটপাতবাসীর জন্য সবজি দিয়ে রান্না করা পাতলা খিচুড়ি ও মুরগির মাংস সরবরাহ করেন স্বাস্থ্যসম্মত প্যাকেটে মুড়িয়ে।

আর প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫টি অভুক্ত কুকুরের জন্য আলাদাভাবে গরুর ছাঁট মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান। কুকুরের খাবার তিনি নিজেই রান্না করেন।

প্রথমে নিজের অর্থায়নে এই কার্যক্রম শুরু করেন মশিকুর রহমান বাপ্পী। তিনি বলেন, পরে ফেসবুকে বন্ধুদের আহ্বান জানিয়ে বলি যার যার জায়গা থেকে যেন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে অনেকেই উৎসাহী হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তা দিয়েই নিয়মিত এই কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এ বিষয়ে তার বন্ধু বুলবুল ও খালাতো ভাই জিহান তাকে যাথাসাধ্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এছাড়া নিজের ব্যান্ড দলের সদস্যদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছেন তিনি।

বাপ্পী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দরিদ্র মানুষরা যেমন কষ্ট পাচ্ছে তেমনই কষ্ট পাচ্ছে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলোও। মানুষ তো ক্ষুধা লাগলে বলতে পারে কিন্তু কুকুর তাও পারে না। শুধু মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের এই নিরব ভাষা হয়তো সবাই বুঝতে পারে না। একদিন বাজারে গিয়ে লক্ষ্য করলাম ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তারপরেই এই উদ্যোগ নেওয়া। চিন্তা করলাম সবখানে না হোক নিজের এলাকা ও তার আশেপাশে যদি অভুক্ত মানুষ আর কুকুরগুলোকে খাওয়ানো যায় তাও কিছুটা উপকার হয়। তবে কিছু মানুষের সহযোগিতা না পেলে আমার একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব হতো না।

অনেকেই এ কাজে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন উল্লেখ করে বাপ্পী বলেন, এই কাজে যে, সবাই উৎসাহ দিয়েছে বা ভালোভাবে নিয়েছে তা কিন্তু নয়। অনেকেই বলেছেন কয়েকদিন পর মানুষ না খেয়ে থাকবে, সেখানে মানুষের চিন্তা না করে কুকুরের জন্য এত ভাবনা কেন!

এছাড়া নিজের এলাকায় কিছু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিচিত পরিবার আছে যারা চক্ষু লজ্জায় কাউকে সমস্যার কথা বলতে পারে না এমন কয়েকটি পরিবারকে গোপনে কিছু খাদ্যসামগ্রী কিনে দেবেন বলেও জানান বাপ্পী।

তবে যে যাই বলুক যতদিন না দেশ থেকে এই দুর্যোগ শেষ হচ্ছে ততদিন এই কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন, এরপরই তার ছুটি বলেও জানান তিনি।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article