[ad_1]
করোনাভাইরাস সম্পর্কে কী কী জানা প্রয়োজন- সে বিষয়ে গতকাল বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা তুলে ধরা হলো-
কতটা প্রাণঘাতী : কত মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলে মৃত্যুহারও সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান হিসাব করে বলা যায়, এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার ৫ শতাংশের কম। তবে আক্রান্ত হলেও উপসর্গ দেখা যায়নি এমন রোগীর সংখ্যা বেশি হলে মৃত্যুহার কমে আসবে।
উপসর্গ কী কী : জ্বর ও শুকনো কাশিই নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ এর প্রাথমিক উপসর্গ, যেগুলো থাকলে সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া গলাব্যথা, মাথাব্যথা এবং কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো উপসর্গের কথাও এসেছে। কিছু ঘটনায় রোগীর গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পাওয়ার কথাও এসেছে। আবার সর্দি কিংবা হাঁচির মতো উপসর্গ, যেগুলো সাধারণ ফ্লুতে দেখা যায়, সেরকমও অনেকের মধ্যে দেখা যেতে পারে। গবেষণা বলছে, উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়ায় অনেকেই হয়ত নিজেদের অজ্ঞাতে ভাইরাসটি বহন করছেন এবং অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
শিশুদের জন্য ঝুঁকি কতটুকু : শিশুদের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে না এমন নয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই ভাইরাসে শিশুদের আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যুর হার অন্য বয়সশ্রেণির তুলনায় অনেক কম। ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে, শিশুদের থেকে বড়দের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ তারা বড়দের কাছে যায়, মাঠে খেলতে যায়। আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বাড়িয়ে চলা কভিড-১৯ শিশুদের মাধ্যমে কতটা ছড়াচ্ছে, সেই চিত্রটি এখনো স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে।
করোনাভাইরাস কোথা থেকে এল : গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এক বাজার থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, যেখানে বন্যপ্রাণীও কেনাবেচা হতো। সার্সের করোনাভাইরাসের জ্ঞাতি ভাই এ নতুন ভাইরাসকে সার্স-সিওভি-২ নামেও ডাকা হচ্ছে। বাদুড়ে এই ভাইরাস দেখা গেলেও একটি মধ্যবর্তী কোনো প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে এসেছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেই যোগসূত্রটি এখনো স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে। আর যতদিন তা অজানা থাকবে, নতুন প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি থেকেই যাবে।
গরমে কী প্রকোপ কমে আসবে : শীতকালে জ্বর-সর্দি সহজেই কাবু করে মানুষকে। গরমে এই সমস্যা কম হয়। তবে গরমকালে নভেল ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে কি না- নিশ্চিত করে তার উত্তর দেওয়ার মতো প্রমাণ গবেষকরা এখনো পাননি। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঋতু বদল এই ভাইরাসের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রভাব যদি থেকেও থাকে, তা সাধারণ জ্বর-সর্দি বা ফ্লুর ভাইরাসের ক্ষেত্রে যে প্রভাব, তার চেয়ে কম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গরমে যদি সংক্রমণের হার সত্যি সত্যি অনেক কমে যায়, তাহলে এই আশঙ্কাও থাকবে যে শীতে হয়ত সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাবে। আর ওই সময়টায় এমনিতেই হাসপাতালে সাধারণ ফ্লুর রোগীর ভিড় লেগে থাকে।
কারও কারও অবস্থা সংকটাপন্ন হয় কেন : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই মৃদু অসুস্থতা অনুভব করেন। তবে ২০ শতাংশের অসুস্থতা গুরুতর রূপ পায়। এর একটি কারণ হতে পারে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ওই ক্ষমতা যার যত সক্রিয়, তার মধ্যে অসুস্থতার মাত্রা হয়ত তত কম। এক্ষেত্রে জেনেটিক গঠনও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এ বিষয়গুলো বোঝা গেলে রোগীকে আইসিইউতে না রেখেও চিকিৎসা দেওয়ার পথ পাওয়া যেতে পারে।
একবার সেরে উঠলে আবার হতে পারে : এ বিষয়ে যত জল্পনা কল্পনা আছে, প্রমাণ তেমন কিছুই বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একবার জয়ী হলে, সেই এন্টিবডি যে স্থায়ী হবে, সেই নিশ্চয়তাও তাই পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাদের মধ্যে কারও কারও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার খবর কিছু জায়গায় এসেছে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভুল থাকার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অর্থাৎ এমন হতে পারে যে, পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসায় রোগীকে যখন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তখনো হয়ত তার মধ্যে সংক্রমণ ছিল। আর এই ভাইরাসের সঙ্গে গবেষকদের পরিচয় যেহেতু মাত্র তিন মাসের, সেহেতু নিশ্চিত করে কিছু বলার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তও গবেষকদের হাতে নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ভাইরাসকে মোকাবিলা করার জন্যই এন্টিবডির বিষয়ে ফয়সালা হওয়াটা জরুরি।
এ ভাইরাস কী নিজেকে বদলাচ্ছে : ভাইরাসের ক্ষেত্রে জিনগত পরিবর্তন খুব সাধারণ ঘটনা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিনকাঠামোতে ওই পরিবর্তন খুব বড় কোনো প্রার্থক্য তৈরি করে না। সাধারণভাবে মনে হতে পাওে যে যত দিন যাবে, এ ভাইরাস মানুষের জন্য তত কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে সেটা যে হবেই, সেই নিশ্চয়তাও দেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যাটা হচ্ছে, এ ভাইরাস যদি নিজেকে বদলে ফেলতে পারে, তাহলে শরীরে আগে তৈরি হওয়া এন্টিবডি হয়ত আর তাকে চিনতে পারবে না। তখন পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।
[ad_2]